ভালবাসা কোনোদিন নীতি নিয়মানুগ হয় না।
রেশ সিরিজ টি তৈরি হওয়ার আগে আরেকবার পড়লাম তিলোত্তমা মজুমদারের চাঁদের গায়ে চাঁদ। উপন্যাসটির বিষয় সমকামিতা। বাংলায় এর আগে শুধু এই বিষয় নিয়ে কোনো পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস লেখা হয়েছে কিনা আমার জানা নেই । সমকামিতার এই ব্যাপারটাকে তিলোত্তমা বিচার করেছেন মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। আমাদের রেশ সিরিজটিতে আমরা সেই এক চেষ্টা করেছি। আমরা বলতে চেয়েছি যে সমকামিতার মধ্য দিয়েও আমাদের শর্ট ফিল্মের সুরিন্দার (দেয়ানেয়া) বা রণিত (দত্ত) যা প্রকাশ করতে চাইছে তা প্রেম। মানুষে মানুষে প্রেম।
এর আগে ওনি-র My Brother Nikhil বা করণ জোহারের Ajeeb Dastaan Hai Yeh জোয়া আখতারদের Made in Heaven বা হনসাল মেহেতার আলিগড়। বেশ অন্যরকম লেগেছিলো । তাই নিজেরা যখন অ্যান্থোলজি তৈরি করবো ভাবলাম তখন সমকামিতাকে বিকৃত যৌনতার তকমা থেকে সরানোর আরেকটা প্রচেষ্টা শুরু করলাম। আমাদের মতে এটাও প্রেম এবং সমীহযোগ্য, যদিও মানুষের তৈরি নিয়ম, সংস্কার, ঔচিত্যবোধ এটাকে মর্যাদা দেয় না। প্রাচীন গ্রিসে পুরুষদের মধ্যে সমকামিতার স্বীকৃত চল ছিল, কারণ শৌর্যে ও বীর্যে অহঙ্কারী পুরুষেরা মেয়েদের সঙ্গে বেশি মাখামাখিকে নিন্দনীয় ও দৌর্বল্য বলে মনে করতো। অবশ্য প্লেটো, এই পুরুষদের নিন্দে করতেন। অ্যারিস্টটলও তাই।
অ্যারিস্টটলের মতে সমকামিতা টেনে টেনে চুল ছেঁড়া বা নখ কাটার মতোই একটি বদ অভ্যেস। সমকামিতা হয়তো আরও পুরনো। মানুষের সৃষ্টিলগ্ন থেকেই হয়তো ওটা আছে। লিখিত প্রমাণ নেই বলে আমরা জানি না নিয়েনডার্থাল বা হোমো স্যাপিয়েন্সরাও গুহার অনন্ত অন্ধকার ও স্তব্ধতায় সমকামিতাচর্চা করত কি না। করার সম্ভাবনাই বেশি, কারণ এই অভ্যেস তো আদিম, যৌনক্ষুধারই একটি বিচিত্রতর বহিঃপ্রকাশ। শুধু আধুনিক মানুষেরই কোনও মহৎ আবিশকার বা প্রবৃত্তি তো নয়। বরং আধুনিক যুগে এটাকে আরও গুরুত্ত্বের সঙ্গে, আরও সহমর্মিতার সঙ্গে, শারীরতত্ত্ব ও মনস্তত্ত্বের দৃষ্টিকোণ থেকে বোঝার চেষ্টা করছি আমরা। মানছি এঁরা অসুস্থ নয়। এটাকে আইনি স্বীকৃতিও দেওয়া হচ্ছে।
রেশ সিরিজের আগে তাই দেবাশীষ, সপ্তর্ষি, মনিষ, সেলিম, আটেশ, অভিজিৎ দের নিয়ে বসে দিনের পর দিন আলোচনা করা - A Single Man, Supernova বা Call Me by Your Name এর মতো সিনেমা আবার দেখানো চলতে লাগলো। সম্প্রতি কঙ্কনার গিলিপোচি এতো "নর্মাল" লাগলো - ভাবলাম এই যে এতদিন জেন্ডার এর সেশান নেওয়া হলো দেখা যাক কে কি ভাবে ভিতরে নিলো। যখন ওঁরা আমাকে যা যা প্লট দিয়েছিলাম তার ভিত্তিতে স্ক্রিপ্ট লিখে পড়ে শোনালো মনে হল পরিশ্রম সার্থক। ফিল্মগুলো একটু হলেও লোককে ভাবাবে। আমাদের প্রতিটি ফিল্ম তাই মানুষের প্রতি মানুষের অসহায় প্রেমেরই গল্প। সমকামিতা বা যৌনতা তো নিছক মাধ্যম। অন্ধকারে ধাপের সঙ্গে ধাপ জড়িয়ে পড়ে থাকা একটি আচ্ছন্ন সিঁড়ির মতো। ওই সিঁড়ি্র শেষে যে সোনালী আকাশ পাওয়া যাবে, আসল লক্ষ্য তো তারই দিকে।
৩রা ডিসেম্বার সবাইকে নিয়ে বসে দেখার ইচ্ছে। আমন্ত্রণ রইলো সবার।
Commentaires