সম্পর্ক যখন দাবি-দাওয়ার শেকলে হাত-পা বেঁধে রাখে ও বাধ্যতামূলক উদযাপনে সামিল করতে থাকে – তখন ধীরে ধীরে স্বতঃস্বফূর্ততা হারিয়ে সেই সম্পর্ক অন্ধকূপে ঢুকে পরে । শ্বাস রোধ হয়ে আসে। অধিকাংশ মানুষ সেই অন্ধকারে মুখ গুঁজে দিন যাপন করে। তিথি তার থেকে নিজেকে বাইরে বার করে আনতে চায়।
মানুষ সহজে ভুলে যায়, আমি ভুলতে পারি না
এখনো শিশির দেখে অশ্রুভেজা চোখ মনে পড়ে,
সবুজ অরণ্য দেখে মনে পড়ে স্নেহের আঁচল
ভোরের শিউলি দেখে শৈশবের স্মৃতি চোখে ভাসে।
মানুষের মতো আমি এতো বেশি স্বাভাবিক নই
আমার নিশ্বয় কিছু স্নেহমায়া, পিছুটান আছে,
শোকদুঃখ, ভালোবাসা আমাকে এখনো দগ্ধ করে
পাথরের মতো এতোটা নিস্পৃহ আমি হতে পারি নাই।
মানুষ সহজে ভুলে যায়, বেশ ভুলে যেতে পারে
আমি এ-রকম ভুলতে পারি না। শুধু মনে পড়ে,
জল দেখে মনে পড়ে, মেঘ দেখে মনে পড়ে যায়
আঁধারে হারালো যারা সেইসব হারানো মানুষ।
কোথাও পাবো না তারে বৈশাখে কি ব্যথিত শ্রাবণে
মানুষ সহজে ভোলে, আমি কেন ভুলতে পারি না
এই ফিল্মে তিথির বিয়ে হয় ভোগবাদী স্বার্থসর্বস্ব অনুরাগের সঙ্গে।অনুরাগ পেশাদার একজন ব্যবসায়ী।অনুরাগ তিথিরমন বোঝে না, নিজের আত্মসর্বস্ব চিন্তার ফাঁদে অনুরাগ বুঝি আর-এক উন্মাদ।
তিথি যেন এক বন্দিনি জলকন্যা। তিথি তাই নিজেকে খুঁজতে গিয়ে বারবার ফিরে যান সেইসব স্মৃতির কাছে, যেখানে নদীর ধারে ফেলে এসেছেন এক টুকরো শৈশবকে।
এই সিনেমা দেখতে দেখতে মনে পড়ে যায় লা সুগ্লিয়াভিলি, মেরাব নিনিডজা, ব্রেটা কেপাভা অভিনীত জর্জিয়া দেশের ছবি My Happy Family -র কথা। পঞ্চাশ বছরের মানানা যখন নিজের পরিবার থেকে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেন তখন সবার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে - এইরকম সোনার সংসার কোন পাগলে ছাড়ে। স্বামী তো কোনদিন গায়ে হাত পর্যন্ত তোলেনি - কেউ বোঝেনা স্বামী কোনদিন গায়ে হাত সংবেদনশীল মন নিয়ে দ্যাননি । সবসময়ই কি পেতে পারি তার প্রত্যাশা ।
তিথির মানসিক ভারসাম্য নড়ে যায়। নিজ নিকেতনে ফিল্মটিতে আমরা দেখি কামতত্ত্ব শরীর ও মনকে পৃথক করে রেখেছে । এক মতাদর্শগত প্রভুত্বের জোরে নারীকে করে রেখেছে যন্ত্র। ভালোবাসার স্থান তাহলে কোথায়?
অন্বেষা দত্তের "ফেরা' অবলম্বনে প্রয়াসম ভিস্যুয়াল বেসিকসের নিজ নিকেতনে গড়ে তোলা হয়েছে। এই ফিল্মে আমরা যে গার্হস্থ্য নির্যাতন দেখি সেটি কিন্তু শারীরিকের চেয়েও মারাত্মক । গার্হস্থ্য নির্যাতনের রকমফের আছে। মারধর, গালাগাল, যৌন অত্যাচার— পারিবারিক গণ্ডির মধ্যে মেয়েদের উপরে এ সব নিত্য ঘটে। অত্যাচারের ধরন যা-ই হোক না কেন, ফল একটাই— নির্যাতিতার চরম অপমান, আত্মবিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত । আর এটাই নির্যাতনের উদ্দেশ্য। মেয়েদের আত্মবিশ্বাস যত তলানিতে ঠেকবে, ততই তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুবিধা হবে।
এই ফিল্ম আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যেখানে বিচ্ছেদ’ কাব্যনাট্য, জয় গোস্বামীর সেই লাইনটি - সে এখন নিজের ভিতরে ঢুকে বন্ধ হয়ে থাকা / এক প্রাণী / তার পুরো কথা আমরা কখনও জানব না-/ এসো, আজ একটু একটু জানি।
নিজ নিকেতনের ট্রেলার দেখতে ক্লিক করুন নীচের লিঙ্কে
Comentarios