১৯৭৬ সালের জানুয়ারী মাসে আমাদের বাড়িতে টিভি আসে। তখন শনিবার হিন্দী ছবি আর রোববার করে বাংলা ছবি দেখানো হতো -বিজয় আরোরা আর রাধা সালুজা (কেন জানিনা বারবার করে গুগল যোগিতাবালী দেখাচ্ছে) অভিনীত এই ছবিটি কোনও একটি শনিবার দেখানো হয় আর কোনও না কোন ভাবে আমার শিশু মনে এই ছবিটি দাগ কাটে এর গল্পের জন্য। একজন ইয়াং পরিবারহীন নেভাল অফিসার এর লাইফে কিভাবে সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে মানুষ একের পর এক এসে জড় হয়ে তাঁর নিজের এক পরিবার তৈরী হয় তার গল্প। এই ছবিতে আরও অভিনয় করেছিলেন প্রাণ, কামিনী কৌশল, মেহেমুদ, অরুণা ইরানী এনাদের মতো বড় অভিনেতারা। ওই সময়ে আমার এই ছবির প্রতিটা সম্পর্ক এতো অন্যরকম লেগেছিলো – আর বারবার মনে হতো ইস এইরকম পাঁচমেশালী লোক যদি একটা বাড়িতে থাকতো তাহলে বেশ হতো।
যে যখন আমি নিজে প্রয়াসম পরিবার একটু একটু করে গড়ে তুলছি তখন একে একে যখন সপ্তর্ষিদেবাশীষ , প্রশান্ত, সালিম, সুজিত, মনিষ এঁরা যখন এক এক করে এসে আমার কাঁধে কাঁধ মেলালো তখন বারবার এই সিনেমাটার কথা মনে পড়তো। যাদের ওপর আজ পুরো প্রয়াসম এবং আমি নির্ভরশীল আজ থেকে কিছদিন আগে পর্যন্ত তাঁদের কোনও অস্তিত্ত্ব আমার জীবনেই ছিলো না। তাই Blood Relation কথাটা অন্তত আমাদের ক্ষেত্রে খাটে না। একেক সময় অবাক লাগে ভাবতে ১৯৯৭ সালে সালিম জন্মায় আর সে বছর প্রায় ঠিক ওই সময়েই আমরা সেলিব্রেট করছি প্রয়াসমের একবছর। আর আজ সালিম আমাদের প্রয়াসম ভিস্যুয়াল বেসিকস হেড করছে। প্রায়ই বিজ্ঞের মতো আমাকে প্রচুর “তত্ত্বকথা” শোনায়। এইরে ভুলেই গেলাম সিনেমাটার কথা। হ্যাঁ, তা যা বলছিলাম, এই এক মুঠি আসমানের মদনমোহনের সুরে কিশোরকুমারের একটি গান আজও হামেশাই শোনা যায়…
পরবর্তীকালে এই সিনেমাটি বাংলায় রিমেক করেন অনিকেত চট্টোপাধ্যায়। নাম দিয়েছিলেন গোড়ায় গণ্ডগোল। রাহুল-সম্পূর্ণা অভিনীত এই ছবিটি একটু বোধহয় চড়া কমেডির মোড়কে তৈরি। তবে চলেছিল ভালো। আমার এক মুঠি আসমান ভালো লাগে কারণ আমি ঠিক এই দর্শনে বিশ্বাস করি যে রক্ত না আসল সম্পর্ক মনের। আর সেটা আমি খুব ভালো করে বুঝি আমাদের প্রয়াসমে। এক অদ্ভুত তারে বাঁধা আমাদের প্রত্যেকের মন – আমাদের নিজেদের শর্ট ফিল্ম সখা -র রিনা সেন এর কথায় কিছু সম্পর্কের বোধহয় কোন নাম হয় না – আমিও তাই বিশ্বাস করি মিস সেন।