amlan ganguly
আলো বাবা...
জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভাল...জীবনের এই পাঠ এর প্রথম চাক্ষুষ উদাহরণ পাই আরব্য রজনীর একটি গল্পকে ভর করে গড়ে ওঠা এই মর্জিনা আবদাল্লা সিনেমাটিতে। এখনও মনে আছে শুধু লাস্ট সীনে যেখানে হায় হায় প্রাণ যায়... গানটায় মর্জিনা রূপি মিঠু মুখোপাধ্যায় নেচেছিলেন সেটা কালারে

ছিলো । আমরা বিজলীতে সিনেমাটি দেখি মানি, নাড়ুকাকু, ফুলদিমাসি, দিদি, দোলাদিদি -র সঙ্গে। এই সিনেমার চিচিং ফাঁক - নিয়ে মাতামাতি করেনি এমন বাচ্চা ছেলেমেয়ে বাঙালি বাড়িতে পাওয়া দুষ্কর। মিঠু মুখোপাধ্যায়, রবি ঘোষ, উৎপল দত্ত, শেখর চট্টোপাধ্যায়, দেবরাজ রায়, গীতা দে, জহর রায়, কাজল গুপ্ত, তো আছেনই - সঙ্গে আলিবাবার চরিত্রে (যাকে আমি আলো বাবা বলেই ডেকে আসলাম) সন্তোষ দত্তের মতো সেন্সেটিভ অভিনেতা। একজন স্নেহ প্রবণ মনিবের চরিত্রে সন্তোষবাবু অনবদ্য। একটা কমার্শিয়াল ফিল্ম কিন্তু তার আঙ্গিক এতো চমৎকার যে সবার মন কাড়তে বাধ্য। এই সিনেমার সবকটি গান সুপার ডুপার হিট - তবে আমার পছন্দের গানটি হলো - ও ভাইরে ভাই...আমার প্রিয় লাইন..বরাত ফরাত কিছু মানিনা কি হবে কার তাতো জানিনাhttps://www.youtube.com/watch?v=_62ZHZdVxyY
এই সিনেমায় সলিল চৌধুরী মিউজিক দিয়েছিলেন। এখনও প্রায়ই অনামি পাড়ার পূজো মণ্ডপে যেখানে থীম পূজো-র হাওয়া লাগেনি, এই সিনেমার মন মাতিয়ে তোলা গান গুলো শুনতে পাওয়া যায়। ছয় বছর বয়েসে এই সিনেমায় যখন আলিবাবা, বাঁদি মর্জিনা কে নিজের ছেলের বউ করলো আর আবদাল্লাকে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিলো কি যে আনন্দ পেয়েছিলাম। অনেকদিনবাদে যখন প্রশান্তরা ধরলো যে নিজেরা একটা নাটক মঞ্চস্থ করলে হয় তখন আলিবাবা কে আলোবাবা করে একটা স্ক্রিপ্ট লেখা হল - কয়েকদিন এলাকার মা বাবাদের নিয়ে সুদীপা-অনুসূয়ারা রিহার্সাল করালো কিন্তু তারপর নানারকম কাজে ফেঁসে গিয়ে সেটা আর করা হয়ে ওঠে নি। তবে আমিতো eternal optimist আবারও চেষ্টা করছি আলোবাবা-র ওই প্রজেক্টটিকে মনিষকে দিয়ে রিভাইব করার - দেখি এইবার কি হয়।

১৯৮০ সালে দিদি-র সঙ্গে আলিবাবা আউর চালিশ চোর দেখতে গিয়েছিলাম। এতো বোরিং সিনেমা আমি খুব কম দেখেছি। কে যে কি সেটা ঠাউর করতে করতেই সিনেমা কাবার। শুধু গ্ল্যামারের ঝলকানি। পাওনা বলতে আর ডি বর্মনের সুরে দু একটি মনে রাখার মতো গান। যার একটি আমার দারুণ পছন্দ - লতা মঙ্গেশকারের গলায় আ যা সা -রে বাজার মে তেরা -
https://www.youtube.com/watch?v=24be1ZKh92w
আমি বাংলায় মর্জিনা আবদাল্লা সিনেমায় আলিবাবার চরিত্রে যে ধৈর্য বা স্থৈর্য দেখি তা নিজের সামনে দেখতে পাই আমাদের ডাইরেক্টার জেনারেল, দেবাশীষের মধ্যে। অনেক বছর আমাদের সঙ্গে কাজ করছে - কচ্চিত কদাচিৎ ওকে ধৈর্য হারাতে দেখেছি। সপ্তর্ষির টোট্যাল opposite...একজন মানুষ।

দেবাশীষের সবচেয়ে বড়গুণ হলো emotion কে control এ রাখা। অনেক সময়েই অফিসে এমন পরিস্থিতি আসে যে মাথা ঠিক রাখা দায় হয় কিন্তু ওইসব সময়েও দেবাশীষকে perturbed হতে দেখিনি। এতোদিন প্রায় একা হাতে ফাইন্যান্স সামলে এসেছে। এখন প্রশান্ত ওকে এ ব্যাপারে অ্যাসিস্ট করছে। সঙ্গে আছে আরও অন্যরা। শুধু যে ফাইন্যান্স দেখছে তা নয় তার সঙ্গে সেলিমের আগে ও আমার সঙ্গে বসে আমাদের অ্যানুয়াল অ্যাক্টিভিটি রিপোর্ট কম্পোজ করতো আর আমার যতো রকমের উদ্ভট ডিজাইন painstakingly ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে তার বাস্তব রূপ দিতো। অফিসে একটা জোক খুব প্রচলিত যে দাদা যাকে নিয়ে কম্পোজের কাজ করে তারই চোখের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। দেবাশীষের বীভৎস পাওয়ার। চশমা ছাড়া কিচ্ছু দেখতে পায়না। আর এই সেইদিন সেলিমেরো দেখলাম চশমা লাগছে। কি বিপদ। (সেলিমের এই ছবিটা অবশ্য সানগ্লাস পড়ে)। দেবাশীষ কে সবাই অফিসে Mr. Dependable

বলে ডাকে । উচ্ছ্বাস বা বিষাদ কোনটাই বেশি না। অফিসের একজন সিনিয়ার যে পুরো decorum মেনে কাজকর্ম করে। ওঁর উত্তরসূরি খোঁজা বা তৈরি করা খুব মুশকিল। কিন্তু এরমধ্যেও মনিষের মধ্যে দেবাশীষের অনেক traits আমার চোখে পড়ে। দেবাশীষ চিরকাল সপ্তর্ষির খেয়ালী ব্যাপার স্যাপারগুলো আড়াল করে এসেছে, যখনই ঝামেলা উপস্থিত তখনই আমাকে বুঝিয়েছে - ও ঠিক সামলে নেবে স্যার - আর এখন ঠিক একই রকম কথা আমি মনিষের থেকে শুনি - আপনি চিন্তা করবেন না দাদা, সেলিম ঠিক করে নেবে। মনিষও অফিসিয়াল লেভেলে খুব কম ইমোশান দেখায়। নিজেকে ঠিক সময়ে সামলে নিতে জানে আর জানে কাজ করতে গেলে সবাইকে নিয়ে করতে হবে । কে ভালো কে খারাপ তা দেখতে গেলে "গা" উজাড় হয়ে যাবে। এখন দেখি,মনিষ আলিবাবা থেকে "আলোবাবা"- হয়ে উঠতে পারে কিনা।
