amlan ganguly
ঘাটশ্রাদ্ধ... A journey in reels
“Ghatashraddha” tells you a story of the past, but acquires a contemporaneity for the manner in which it faces up with the present.

শব্দদের চরিত্র ভারী অদ্ভুত। আমাদের এই ফিল্মের নায়কের নাম, নিনাদ যার মানে বয়ে চলা জলের শব্দ। কখনও তারা ভিড় তৈরি করে, কখনও একলা পাড়ি দেয় অন্তরের গহিনে।কখনও সেই শব্দের মায়াজাল বুনে তৈরি হয় শব্দের বহুস্বর। সেখানে নেই সান্ত্বনার আশ্বাস অথচ আছে নিরন্তর নিজেকে খুঁজে নেওয়ার প্রচেষ্টা। কোথাও জমা আছে তারুণ্যের ক্ষোভ, কোথাও আবার প্রকাশ্যে হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে আসতে চায় সারাজীবনের বেদনা, অপমান, ক্লান্তি আর নিরবচ্ছিন্ন একাকিত্ব।

মানিনী এইসবের মাঝে দেখেন জীবনের যাওয়া আর আসা। তাই ঘাটশ্রাদ্ধ হয়ে ওঠে বিষাদ, কখনও বা একঘেয়েমি ভরা জীবনকথা।

‘বেলা বয়ে যায়, এ আঁধার বুঝি / অন্তহীন / ফুরোয় না তবু বিষাক্ত বেলা ব্যথার / দিন / ফুরোতে চায়না হাড় পাঁজরের এই / পরিহাস / বয়ে যায় বেলা বয়ে চলে ঋতু বারোটি / মাস।’

তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নসুবালাকে রচনা করেছিলেন একদম বাস্তবের আদলে। যে কিনা শরীরে পুরুষ কিন্তু মননে নারী। ‘হাঁসুলীবাঁকেরউপকথা’ তারাশঙ্করের শ্রেষ্ঠতম উপন্যাসের বিখ্যাত চরিত্র নসুবালা।যাকে বাস্তবের লালমাটি থেকেই তুলে এনেছিলেন লেখক। সেটা১৯৪৭সাল।এমন একটি চরিত্রকে বাস্তবেও দিনের পর দিন দেখেছিলেন তারাশংকর।এবং তাঁকে বিন্দুমাত্র বিকৃত না করে তুলে ধরেন তাঁর উপন্যাসে।

কিন্তু ১৯৬২ সালে যখন তপন সিনহা ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ ছবি করলেন, তখন তাঁর নসুবালা হল একজন পূর্ণ নারী চরিত্র। চরিত্র চিত্রণে লিলিচক্রবর্তী।লিলি চক্রবর্তীর কেরিয়ারে আইকনিক চরিত্র নসুবালা।কিন্তু তপন সিনহার ছবি দেখে চটে গেলেন তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়। তারাশংকর বললেন, “তপনবাবু আপনার ছবিতে নসুবালা মেয়ে চরিত্র কেন?” তিনি তো নসু কে মেয়েলি পুরুষ করে লিখেছেন। যে আদতে পুরুষ। তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তপন সিনহা গেলেন সেই গ্রামে আসল নসুকে দেখতে।কিন্তু নসুবালাকে পুরুষ চরিত্রে দেখাতে পারলেন না তপনসিনহা, যাঁর আবার আরেকটি পুরুষের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কও ছিল।এই দৃশ্য দেখানোর মতো সাহসিকতা ষাটের দশকের বাংলা ছবিতে ছিলনা।তপনবাবু বিদেশ ঘুরে পুরস্কার জিতে এলেও তিনি এই সাহস তাঁর ছবিতে দেখাতে পারেননি।দর্শক জানল নসুবালা নারীই । কিন্তু আদতে সে ছিল নারী সুলভ পুরুষ ।

মানিনী সদ্য পার করছেন শোকের দুনিয়া। সেখানে নেই সান্ত্বনার আশ্বাস। অথচ আছে নিরন্তর নিজেকে খুঁজে নেওয়ার প্রচেষ্টা। মানিনী তাই নিজেকে খুঁজতে গিয়ে বারবার ফিরে যান সেই সব স্মৃতির কাছে, যেখানে ফেলে এসেছেন এক টুকরো সাংসারিক জীবন কে। তাঁর নিনাদ কে, বয়ে চলা জলের শব্দের মতই যা তাঁকে ঘিরে রেখেছে, রাখবে সারাজীবন।

ঘাটশ্রাদ্ধের ট্রেলারদেখতে ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে...