amlan
PARTY
I know this is war, but the rest of us are trying to pretend it's a party...

আমাদের দৃষ্টি সাধারণত যা দ্যাখে তাই বাস্তব। মানুষ যখন এই বাস্তবতাকে সামাজিক ও মনস্তাত্তিক পরিসরে উপস্থাপন করতে শুরু করল-তখনই এর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে এক ধরনের চিন্তা প্রক্রিয়ার সূচনা হল। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে দর্শনে পরিবর্তিত কলা, সাহিত্য, নাটক ও চলচ্চিত্রে এর প্রয়োগ ও সংজ্ঞা নিরুপণ জরুরী হয়ে পড়ল। পরে বিশেষ করে ১৮৯৫ সালে চলচ্চিত্রের প্রথম প্রদর্শনের সাথেই যান্ত্রিক পুনঃপ্রদর্শনের (ওয়াল্টার বেঞ্জামিন) মাধ্যমে বাস্তবতা পেয়ে গেল এক নতুন মাত্রা। এর কিছুদিনের মধ্যে বার্জা আমাদের জানিয়ে দিলেন-ক্যামেরার মাধ্যমে চলচ্চিত্র বাস্তবতার হুবহু প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে পারার মাধ্যমে মানুষের স্থান ও সময়কে ধরে রাখার বহু পুরোনো ইচ্ছা পূর্ণ হল। বলার অপেক্ষা রাখে না চলচ্চিত্রের এই বাস্তবতা তথা সাধারণ মানুষের চারপাশে ঘটে যাওয়া প্রাত্যহিক ঘটনা বা জীবনকে জীবনের মতো দেখানোর যে প্রয়াস চলছে তাই নিয়েই প্রয়াসম ভিস্যুয়াল বেসিকস গত আট বছর ধরে ব্যাড অ্যান্ড বিউটিফুল ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল আয়োজন করে চলেছে। এই বছর আমাদের ফেস্টিভ্যাল ৯ বছরে পা দিলো। এইবারে আমরা তৈরি করলাম ৮ টি এক্কেবারে ভিন্ন স্বাদের ছবি।

আমরা জানি চিত্রনাট্য হল চলচ্চিত্রের লিখিত রূপ ও নির্দেশিকা। এই চিত্রনাট্য অবলম্বনে চলচ্চিত্র দৃশ্য সংকেতে আবদ্ধ না থেকে দৃশ্যময়তায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে। চিত্রনাট্যের মধ্যে নতুন সাহিত্য-সংরূপের সমস্ত সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। চলচ্চিত্রের ভাষা আয়ত্ত করে চিত্রনাট্য নতুন সৃষ্টিরূপে সাহিত্যের রস সঞ্চারিত করে। ২০২২ এর ৬ই ফেব্রুয়ারী পার্টির কাস্টদের নিয়ে আমরা বসি। তখনও কোলকাতা থেকে শীত এক্কেবারে উধাও হয়ে যায়নি। সবে বিকেল হবে হবে সেই সময় এক এক করে আসলেন অরূপবাবু, রঞ্জিতা, সোনালীদি, মৌ দি, বিজনবাবু, চন্দ্রাদি, নন্দিতা, মীরাদি, জাফিরুল, দেবাশীষ, মিতাদি, বাসবদত্তা ও সুদেষ্ণা। এই বছরের সেই প্রথম টেবিল রিড। আমি একই সঙ্গে চিত্রনাট্য পড়ছি আর অভিনেতাদের মুখের অভিব্যক্তি বুঝতে চেষ্টা করছিলাম। পড়া শেষ হল - একবার সবাইকে পড়তে বললাম। কোনরকম ভুল না করে যে যার রোলটি পড়ে ফেললেন। বুঝলাম যখন পড়ছিলাম মন দিয়ে সবাই শুনেছেন।

পার্টির গল্পটা অনেকটা এইরকম - সুরঞ্জনা নিজের স্মরণসভায় নিজে উপস্থিত। ফ্যান্টাসির মধ্যেও দেখতে পাচ্ছেন সমাজের কতগুলো সংকটকে, সমাজের কতগুলো অশান্তিকে, অপশক্তিকে। সমাজের দুর্নীতির দিকগুলো, ভণ্ডামির দিকগুলো বা বর্জনীয় দিকগুলোর দিকে সে তার শ্লেষ নিক্ষেপ করছে। ফ্যান্টাসি এসেছে, কিন্তু সেগুলো এসেছে সোশিয়ো-ইকোনমিক বেসকে বজায় রেখেই এবং সেখানে প্রাধান্য পেয়েছে উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্তদের জগৎ যে জগৎটাকে উনি জানেন।



পোশাকি নাম নিউ ওয়েভ। তাঁর লিখিত ম্যানিফেস্টো থাকলেও ছাপানো ইস্তেহারের নিয়মাবলি মেনে কখনওই বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতে আসেনি নতুন ঢেউ। আবার কখনও শুধুমাত্র একটি ছবি দিয়েই আলাদা করা যায়নি সিনেমার নিউ ওয়েভ বা নবতরঙ্গকে। নিও রিয়্যালিজম, নিউ ওয়েভ, ফ্রি সিনেমা- যে ভাষাতেই তাকে ডাকা হোক না কেন, একটা সময় পরে তথাকথিত সমস্ত কিছু ভেঙে জীবনের জয়গানই হয়ে উঠেছে উপজীব্য।



বদলে গিয়েছে ন্যারেটিভ, গল্প বলার আঙ্গিক। তৈরি হয়েছে আন্দোলন। গোদার, ডি সিমা, কিয়ারোস্তামি, ক্রফো থেকে শুরু করে মৃণাল সেন, সত্যজিৎ রায়, মণি কাউল হয়ে হালফিলের বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত অতনু ঘোষের ছবিতে উঠে এসেছে সমাজের খণ্ডচিত্র। আর তা থেকেই তৈরি হয়েছে। সিনেমার নতুন ভাষা।অন্ধকারের আলো ছুঁয়ে যায় অন্ধকেও।ঠিক সেভাবেই নজরদারি ক্যামেরার স্পর্শ আজ লেগে থাকে আমাদের শরীরে শুধু নয়, আত্মায়ও। কত কিছু আজ আমরা দেখতে পাই না।ঘাসের গায়ে শিশির, সমুদ্রের ওপর কুয়াশা, সদ্য বিধবার কান্না অথবা সদ্য প্রসূতির হাসি।কিন্তু কেউ-বা কিছু সর্বক্ষণ আমাদের দেখে, দেখতে থাকে...। আমরা একদম একাকী হয়েও মুক্তি পাই না তার দৃষ্টি থেকে। সে আমাদের ঘুম থেকে স্নান, কান্না থেকে গান, সব কিছুই মনিটর-বন্দি করে রাখে। আমাদের PARTY তে সুরঞ্জনার নির্বাক দৃষ্টি যেন সেই অদৃশ্য ক্যামেরা।
